SATT ACADEMY

New to Satt Academy? Create an account


or

Log in with Google Account

এসএসসি(ভোকেশনাল) - শ্রিম্প কালচার এন্ড ব্রিডিং-২ - দ্বিতীয় পত্র (দশম শ্রেণি) | NCTB BOOK

সঠিক ব্যবস্থাপনার ওপর অধিক এবং লাভজনক উৎপাদন সম্পূর্ণরূপে নির্ভরশীল। ভালো ব্যবস্থাপনার পরও চাষকালীন সময়ে গলদা চিংড়ি চাষের পুকুরে বেশ কিছু কারিগরি সমস্যা দেখা দিতে পারে যার কারণে ব্যাপক হারে উৎপাদনে বিঘ্ন ঘটার সম্ভাবনা থাকে। মাছ ও চিংড়ি চাষের পুকুরের এরূপ কিছু সাধারণ কারিগরি সমস্যা সম্পর্কে নিম্নে বর্ণনা করা হলো।

Content added By

পুকুর শুকানো অথবা বিষ প্রয়োগ করার পরও অনেক সময় পুকুর বা ঘেরে রাক্ষুসে ও অবাঞ্ছিত মাছ থেকে যেতে পারে। এছাড়াও বর্ষাকালে পানির সাথে বা অন্য যে কোনা সময় বাইরে থেকে শোল, টাকি, কৈ, শিং, মাগুর, চান্দা, তেলাপিয়া ইত্যাদি মাছ পুকুরে প্রবেশ করতে পারে। এতে ব্যাপকভাবে মাছ ও চিংড়ির উৎপাদন বিঘ্নিত হবে এবং খামার পরিচালনায় লোকসান হতে পারে।
প্রতিকার: পাখি, জাল, বৃষ্টির পানির স্রোত বা মানুষের মাধ্যমে রাক্ষুসে ও অবাঞ্ছিত মাছ প্রবেশ করে। তাই এ সমস্ত উৎস থেকে সতর্ক থাকতে হবে । নিম্নলিখিত ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে উল্লিখিত সমস্যার প্রতিকার করা যেতে পারে।

  • পুকুরে বা ঘেরে বাইরের পানি ঢুকতে না দেয়া;
  •  জাল ব্যবহারের সময় সতর্কতা অবলম্বন করা, এবং
  •  প্রয়োজনে পুকুরের চারদিকে ৩০-৪০ সেমি উঁচু বানা বা মশারী জালের বেড়া বা বেস্টনী দেয়া।
Content added By

অতিরিক্ত শেওলার জন্য পানির রং ঘণ সবুজ বা নীল হয়ে যায়। ফলে রাতের বেলায় পানিতে অক্সিজেন কমে যায় এবং দিনের বেলায় পিএইচ মান বেড়ে যায়। এ ছাড়া শেওলা মরার পর পুকুরের তলায় জমা হয় এবং পঁচে গিয়ে বিষাক্ত গ্যাসের সৃষ্টি করে। এ অবস্থায় অতিরিক্ত অক্সিজেন স্বল্পতার কারণে মাছ ও চিংড়ি পানির উপরিতলে খাবি খায় এবং কখনও কখনও ব্যাপক হারে মারা যায়।

প্রতিকার:

তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা হিসেবে পুকুরে বা ঘেরে অগভীর নলকূপের পরিষ্কার ঠান্ডা পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করা গেলে ভাল হয়। সে সাথে পুকুরে বা ঘেরে খাদ্য ও সার প্রয়োগ সাময়িকভাবে বন্ধ রাখতে হবে। এছাড়াও কিছু সিলভার কার্পের চারা পোনা ছেড়ে জৈবিকভাবে অতিরিক্ত উদ্ভিদকণার উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ করার ব্যবস্থা করা যায়।

Content added By

অতিরিক্ত লৌহ অথবা লাল শেওলার জন্যে পানির উপর লালস্তর পড়তে পারে। ফলে সূর্যের আলো পানিতে প্রবেশ করতে পারে না। এজন্যে পুকুরে খাদ্য ও অক্সিজেন ঘাটতি দেখা দেয়।

প্রতিকার:

ধানের খড় বা কলাপাতা পেঁচিয়ে দড়ি বানিয়ে পানির উপর থেকে টেনে তুলে ফেলা যায়।

Content added By

বিভিন্ন কারণে ঘের বা পুকুরের তলদেশে অ্যামোনিয়া সৃষ্টি হতে পারে। উচ্চতর পিএইচ এ অ্যামোনিয়া চিংড়ির জন্য অত্যন্ত মারাত্মক। পুকুরে ফাইটোপ্লাংকটন বেড়ে গেলে পানির পিএইচ দ্রুত উপরে উঠে আসে। ফলে ব্যাপক সংখ্যায় মাছ ও চিংড়ি মারা যায়। চিংড়ির ফুলকায় কালো দাগ পড়লে বুঝতে হবে নাইট্রোজেন বর্জ্য ও অন্যান্য রাসায়নিকের মাত্রা বেশি। অ্যামোনিয়া বেড়ে গেলে রক্ত পরিবহনতন্ত্র দ্রুত আক্রান্ত হয়।

প্রতিকার:

মজুদ ঘনত্ব কমিয়ে সার ও খাদ্য প্রয়োগ বন্ধ রাখা, সম্ভব হলে ৩০-৫০% পানি বদল ও পানির পিএইচ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

Content added By

অনেক পুকুরেই আগস্ট-সেপ্টেম্বর এবং এপ্রিল-মে মাসে এ সমস্যা প্রকট আকারে দেখা দেয়। সাধারণত ভোর রাতের দিকে মাছ ও চিংড়ি পানির উপর ভেসে উঠে খাবি খেতে থাকে। পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেন কমে যাওয়ার কারণে এটা ঘটে। অক্সিজেন স্বল্পতা যদি খুব বেশি ও দীর্ঘমেয়াদি হয় তবে মাছ ও চিংড়ি দুর্বল হয় পড়ে এবং শেষ পর্যন্ত মারা যায়।

প্রতিকার :

প্রাথমিক অবস্থায় সাময়িকভাবে সার ও খাদ্য প্রয়োগে বন্ধ রেখে বাঁশ পিটিয়ে বা সাঁতার কেটে পানিতে অক্সিজেনের সরবরাহ বাড়াতে হবে। বিপদজনক অবস্থায় পুকুরে পরিষ্কার নতুন পানি সরবরাহ বা স্যালো টিউবওয়েলের মাধ্যমে একই পুকুরের পানি ছিটানারে ব্যবস্থা করতে হবে। তবে দীর্ঘ সময়ব্যাপী পানিতে অক্সিজেন স্বল্পতা চলতে থাকলে বড় মাছ ও চিংড়ি ধরে বিক্রি করা যেতে পারে।

Content added By

সাপ, ব্যাঙ, কাঁকড়া, উদ-বিড়াল সরাসরি খেয়ে ফেলে এবং মাছ ও চিংড়ির উৎপাদন অনেকাংশে কমিয়ে দিতে পারে।

প্রতিকার:

এ সমস্ত প্রাণী নিয়ন্ত্রণে কায়িক মাধ্যমই সবচেয়ে ভালো। উদ- বিড়াল নিয়ন্ত্রণে চুন ভর্তি ডিমের খোসা পুকুরের পাড়ে রেখে দিলে এদের উৎপাত কমে যায়। বাঁশের চাটাই ব্যবহার করে সহজেই কাঁকড়া মারা যায়। সাধারণভাবে ব্যাঙ যে সমস্ত অঞ্চলে ডিম দেয় যেমন- পানি ও পাড়ের সংযোগ স্থলের ঘাস দূর করে ফেলতে হবে। এছাড়াও যে সমস্ত পুকুরের আশেপাশে জঙ্গল থাকে সেখানেই এসব প্রাণির উপদ্রব বেশি হয়। তাই ঘের বা পুকুরের চারপাশ আগাছা জঙ্গলমুক্ত রাখতে হবে। পুকুরের পাড়ে ঘন ফাঁসের পুরাতন জাল দিয়ে বেড়া বা বেষ্টনী দেয়া যেতে পারে।

Content added By

দেশের দক্ষিণাঞ্চলে চিংড়ি চাষের ক্ষেত্রে এটি একটি সাধারণ সমস্যা। প্রায় সব চাষিই প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত খাদ্য প্রয়োগ করে থাকেন। ফলে এসব খাদ্যের একটা বড় অংশ তলায় জমা হয়ে পানির পরিবেশ নষ্ট করে ফেলে। এতে মাছ ও চিংড়ি সহজেই রোগাক্রান্ত হয়ে মারা যায়।

প্রতিকার:

খাদ্য প্রয়োগের পূর্বে খাদ্যের সঠিক মাত্রা নির্ধারণ করতে হবে। মাঝে মাঝে খাদ্য প্রয়োগ স্থানের মাটিতে জমে থাকা অতিরিক্ত কাদা অপসারণ করতে হবে।

Content added || updated By

বৃষ্টি ধোয়া পানিতে পুকুর ঘোলাটে হয়ে যেতে পারে। এর ফলে সূর্যের আলো পানিতে প্রবেশ করতে পারে না এবং প্রাকৃতিক খাদ্য তৈরি বাধাগ্রস্ত হয়। এছাড়াও মাছের ফুলকা নষ্ট হয়ে মাছ মারা যেতে পারে।

প্রতিকার :

বৃষ্টি ধোয়া পানির প্রবেশ রোধ করার জন্য সমতল ভূমি থেকে পুকুরের পাড় উঁচু রাখতে হবে। ঘোলাত্ব নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রতি শতাংশ পানিতে ১ কেজি করে পোড়া চুন বা জিপসাম ২ কেজি হারে প্রয়োগ করা যেতে পারে।

Content added By

অতিরিক্ত খাদ্য ও জৈব পদার্থ পুকুরের তলায়ে জমা হয়ে তলার মাটি কালো দুর্গন্ধযুক্ত হয়ে যায়। বিশেষ করে দীর্ঘদিন ধরে চাষ করা পুকুরে বা ঘেরে এ সমস্যা প্রকট আকারে দেখা দেয়। এর ফলে বিষাক্ত গ্যাস তলায় জমা হয়ে মাছ ও চিংড়ির মড়ক দেখা দেয়ার সম্ভাবনা থাকে। এছাড়াও চিংড়ির দেহ কালো হয়ে বাজার মূল্য হ্রাস করে।

প্রতিকার :

গলদা চিংড়ি ছাড়ার পূর্বে তলার অতিরিক্ত কালো কাদা তুলে ফেলতে হবে। চাষকালীন সময়ে চিংড়ির মড়ক দেখা দিলে দ্রুত পানি বদল, মজুদ ঘনত্ব হ্রাস এবং সার ও খাদ্য প্রয়োগ বন্ধ করতে হবে।

Content added By

চিংড়ি চাষের এটি একটি বড় সমস্যা। স্বভাবগত কারণে চিংড়ি স্বজাতিভুক প্রাণী। যখন এদের খাদ্যাভাব দেখা দেয় তখন এরা অপেক্ষাকৃত ছোট ও দুর্বল আকৃতির চিংড়িগুলোকে ধরে খায় ফলে চিংড়ি আহরণের সময় মজুদের তুলনায় অনেক কম চিংড়ি আহরিত হয়।

প্রতিকার:

মজুদকালীন সময়ে পুকুরে সমান আকৃতির পিএল বা জুভেনাইল মজুদ করতে হবে। এছাড়াও নিয়মিত সার ও সম্পূরক খাদ্য প্রয়োগ করে পুকুরে খাদ্যের পর্যাপ্ততা নিশ্চিত করতে হবে।

Content added By

বৃষ্টির পর অনেক সময় মাছ ও চিংড়ি পানির উপর ভেসে খাবি খেতে পারে। পানির পিএইচ কমে যাওয়ার ফলে এটা ঘটে থাকে। পিএইচ কমে গেলে ক্ষতিকর হাইড্রোজেন সালফাইডের বিষক্রিয়া বেড়ে যায় ফলে অনেক সময় চিংড়ির মড়ক হয়ে থাকে।

প্রতিকার:

বৃষ্টির পরপরই পানির পিএইচ পরিমাপ করতে হবে। প্রতিবার ভারী বৃষ্টির পর শতাংশ প্রতি ৭৫-৮০ গ্রাম হারে পোড়া চুন বা ডলোমাইট প্রয়োগ করতে হবে।

Content added By

অমাবস্যা বা পূর্ণিমা তিথিতে রাতের বেলায় চিংড়ি পাড়ের কাছাকাছি এমনকি পাড়ের উপর চলে আসতে পারে। ফলে শিয়াল বা অন্য কোনো নিশাচর রাক্ষুসে প্রাণী দ্বারা চিংড়ি আক্রান্ত হতে পারে।

প্রতিকার :

অমাবস্যা ও পূর্ণিমার সময় অতিরিক্ত সতর্ক প্রহরার ব্যবস্থা করা। তবে পুকুরের পানির পরিবেশ ভালো থাকলে এ অবস্থা দেখা যায় না। পাড় ঘেঁষে মশারীর জাল দিয়ে বেড়া প্রদান করা যেতে পারে।

Content added By